ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার কি? কেন ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার ব্যবহার করা হয় এবং কিভাবে ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার রান করতে পারি?

ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার কি? কেন ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার ব্যবহার করা হয় এবং কিভাবে ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার রান করতে পারি?

বর্তমান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের কাছে ফেসবুক মার্কেটিং খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পণ্য ও সেবার প্রচারে ফেসবুক মার্কেটিং খুবই জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। আর ফেসবুকে মার্কেটিং করার জন্য ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কম খরচে টার্গেট কাস্টমারের কাছে পৌঁছানোর জন্যই অ্যাড ম্যানেজার ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এবং বুস্ট করা হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল মার্কেটারদের দিয়ে তাদের পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন আবার অনেকে নিজেরাই অ্যাড ম্যানেজার রান করে থাকেন। তবে এটা ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা সেটা দেখার জন্য আমাদের অ্যাড ম্যানেজার সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। আমাদের ফেসবুক পেজে সরাসরি বুস্টের অপশন দেওয়া আছে কিন্তু সরাসরি বুস্ট না করে অ্যাড ম্যানেজারের মাধ্যমে বুস্ট করা উত্তম। ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার কিভাবে কাজ করে এবং কেন অ্যাড ম্যানেজার রান করা হয়ে থাকে আমরা আজ সেই সম্পর্কে জানবো তার আগে জেনে নেওয়া যাক –

অ্যাড ম্যানেজার কি?

অ্যাড ম্যানেজার হচ্ছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ম্যাসেঞ্জার এর মতো সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে বিজ্ঞাপনের জন্য একটি সরঞ্জাম। বিজ্ঞাপন তৈরি করা, কখন এবং কোথায় চালানো হবে তা পরিচালনা এবং আপনার প্রচারগুলি কতটা ভাল ফলাফল করছে তা ট্র্যাক করার জন্য এটি একটি সর্বোত্তম উপকরণ।

ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার কি?

অ্যাড ম্যানেজার একটি ফেসবুক সরঞ্জাম যার মাধ্যমে ফেসবুক বিজ্ঞাপন তৈরি এবং পরিচালনা করা হয়। সমস্ত ফেসবুক প্রচার, বিজ্ঞাপন সেট এবং বিজ্ঞাপনগুলির জন্য ফলাফল দেখতে, পরিবর্তন করতে এবং ফলাফল দেখতে এটা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার একটি অবিশ্বাস্য সরঞ্জাম যার মাধ্যমে আপনি ফেসবুক বিজ্ঞাপন সেট আপ পরিচালনা এবং রিপোর্ট করতে পারেন।

কেন অ্যাড ম্যানেজার রান করা হয়?

অ্যাওয়ারনেসঃ মানুষের মধ্যে আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে ভালো ধারনা তৈরি করার জন্য এবং বিজ্ঞাপন সর্বাধিক সংখ্যক লোকের কাছে পৌঁছানোর জন্য অ্যাড ম্যানেজার রান করা হয়ে থাকে। মানুষ যেন আপনার পণ্য ও সেবা সম্পর্কে জানতে পারে এবং ভালো ধারনা হয় তার জন্য আপনি যদি অ্যাড ম্যানেজারের মাধ্যমে আপনার পেজ বুস্ট করতে পারেন।

কন্সিডারেশনঃ কন্সিডারেশন বলতে বুঝানো হচ্ছে এঙ্গেজমেন্ট। কোনও ওয়েবসাইট, অ্যাপ, ফেসবুক ইভেন্ট বা ম্যাসেঞ্জারে কথোপকথনের মাধ্যমে ট্রাফিক বাড়াতে, পেজে লাইক কমেন্ট, শেয়ার বাড়াতে এবং অন্যান্য ভাবে ট্রাফিকের এঙ্গেজমেন্ট বাড়ানোর জন্য এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

কনভারশনঃ কনভারশন হচ্ছে ওয়েবসাইটগুলোতে, অ্যাপ্লিকেশন বা ম্যাসেঞ্জারে কোনও ক্রয় করা বা অর্থ প্রদানের তথ্য যুক্ত করার মতো মূল্যবান পদক্ষেপ নেওয়া। আপনার পণ্য বিক্রি করার জন্য আপনি গ্রাহকের কাছে ক্যাটালগ দেখাতে পারেন বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপনার স্টোরগুলোর কাছাকাছি সম্ভাব্য গ্রাহকদের পণ্য কেনার জন্য কিছু ডিসকাউন্টের বিজ্ঞাপন দেখাতে পারেন যাতে তারা আপনার অন্যান্য পণ্য সম্পর্কে জানতে পারে।

কিভাবে ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার রান করতে পারি?

আমরা ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজারের মাধ্যমে Ad campaign, Ad set এবং Ad তৈরি করতে পারি। এছাড়াও এর মাধ্যমে ফেসবুক শপ তৈরি করা থেকে আরও অনেক কিছু করতে পারি। তবে এখন আমরা অ্যাড কাম্পেইন, অ্যাড সেট এবং অ্যাড তৈরি করা শিখবো।

অ্যাড ক্যাম্পেইন করতে হলে প্রথমে অ্যাড ম্যানেজার ওপেন করতে হবে। আপনি আপনার ফেসবুক পেজটি ওপেন করুন। তার পাশে একটি ট্যাব নিয়ে facebook.com/adsmanager লিখুন। আপনার অ্যাড ম্যানেজার ওপেন করুন এবং create এ ক্লিক করুন।

ধাপ -১. আপনার অ্যাড ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য নির্বাচন করুনঃ

 

  • ফেসবুকে আপনি আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী campaign objectives বেছে নিতে পারেন। যা আপনার বিজ্ঞাপনের লক্ষ্যের সাথে মেলে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার পেজে ট্রাফিক বাড়াতে হলে আপনাকে ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সিলেক্ট করতে হবে আপনি যদি পণ্য বা সেবা বিক্রি করতে চান তাহলে conversion সিলেক্ট করতে হবে।

এখানে ফেসবুক ক্যাম্পেইনের সম্পূর্ণ তালিকা রয়েছে আপনি এখান থেকে যেকোনটি সিলেক্ট করতে পারেন :

  • ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস
  • Reach
  • Traffic
  • Engagement
  • App installs
  • Video views
  • Lead generation
  • Conversions
  • Product catalog sales
  • Store traffic
  • Messages

আপনার সবসময় সেই উদ্দেশ্যটি নির্বাচন করা উচিত যা আপনার প্রচারের জন্য সবচেয়ে ভালো এবং আপনি সবচেয়ে ভালো ফলাফল পেতে পারেন।

ধাপ-২: আপনার অ্যাড ক্যাম্পেইনের একটি নাম দিনঃ

ক্যাম্পেইন অবজেক্টিভ সিলেক্ট করার পরে, ক্যাম্পেইনের একটি নাম দিন। আপনার পণ্য বা সেবা অনুযায়ী আপনি একটি নাম দিতে পারেন।

ধাপ-৪: টার্গেট অডিয়েন্স নির্ধারণ করুনঃ

অ্যাড ক্যাম্পেইন করার জন্য অডিয়েন্স, লোকেশান এবং বাজেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পণ্য কোন ধরণের গ্রাহকের জন্য আপনি যদি শুধু তাদের কাছেই পণ্য বা সেবা পৌঁছে দিতে চান তাহলে আপনাকে খুব ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে অডিয়েন্স এবং লোকেশান নির্ধারণ করতে হবে।

লোকেশনঃ আপনার ব্যবসা যদি স্থানীয় হয় তবে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় বা নির্দিষ্ট স্থানে বিজ্ঞাপন দিতে চান তাহলে আপনাকে ওই নির্দিষ্ট স্থানটি বেছে নিতে হবে।

এটা হতে পারে কোন দেশ বা কোন নির্দিষ্ট শহর। আপনি আপনার পণ্য অনুসারে লোকেশান পছন্দ করতে পারেন। আপনি যদি আপনার লোকেশানের আয়তন যত বড় করবেন আপনার গ্রাহক তত বাড়বে। আপনি যদি আয়তন কমিয়ে আনেন তাহলে গ্রাহক সংখ্যাও কমে যাবে।

টার্গেট অডিয়েন্সঃ আপনার পণ্য যেসব গ্রাহকের জন্য তাদের বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী গ্রাহক নির্ধারণ করতে পারেন। যদি আপনার পণ্য হয় শাড়ী তাহলে অবশ্যই আপনাকে টার্গেট অডিয়েন্স হবে মহিলা। আবার আপনার পণ্যটি কোন বয়সের নারীদের জন্য উপযোগী তাদের সিলেক্ট করতে হবে তাহলে আপনি আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে পারবেন।

আপনার প্রচারের সেটআপের এই পর্যায়ে আপনার কাছে দুটি বিকল্প রয়েছে:

  • একটি নতুন ফেসবুক টার্গেট অডিয়েন্স তৈরি করুন।
  • একটি সংরক্ষিত অডিয়েন্স ব্যবহার করুন।

ডেমোগ্রাফিক্সঃ আপনার পণ্য বা সেবা কারা ব্যবহার করতে পারে তাদের উপর নির্ভর করে আপনি গ্রাহক বাছাই করলে আপনি দ্রুত আপনার নির্দিষ্ট গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে পারবেন। আপনি যে গ্রাহককে লক্ষ্য করে পণ্য তৈরি করেছেন তার ডেমোগ্রাফিকগুলি আপনি কতটা ভাল জানেন তার উপর ডেমোগ্রাফিক টার্গেটিংয়ের উপযোগিতা নির্ভর করে।আপনার পণ্যটি হয়ে পারে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযোগী আপনি তখন প্রতিষ্ঠান সিলেক্ট করতে পারেন।

আপনি আরও কিছু ক্যাটাগরির মাধ্যমে গ্রাহক নির্ধারণ করতে পারেন যেমনঃ

  • ইন্টারেস্ট
  • Behaviors

বাজেট এবং সময়সীমাঃ অ্যাড সেট করার সময় বাজেট নির্ধারণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

বাজেট দুই ভাবে নির্ধারণ করা যায় –

  • ডেইলি বাজেট
  • লাইফ টাইম বাজেট

আপনি প্রতিদিন কত টাকা বা কত ডলার কত খরচ করতে চান সেটা সেট করতে হবে। আপনি যদি ডেইলি বাজেট সেট করেন তাহলে আপনি কতদিনের জন্য অ্যাড রান করতে চান সেটা উল্লেখ করে দিতে হবে। তাই ক্যাম্পেইন শুরুর তারিখ এবং শেষ তারিখ উল্লেখ করে দিতে হবে। আপনার বাজেট যত বেশি হবে আপনি তত বেশি গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে পারবেন।

 

ধাপ-৫. বিজ্ঞাপন তৈরিঃ

এখন আপনি কোন পণ্যটার বিজ্ঞাপন দিতে ছান সেই পণ্যটাকে সিলেক্ট করতে হবে। আপনি কোন ভিডিও বা ইমেজ বা ক্যারোসেল দিতে পারেন।

আপনাকে ১২০০ পিক্সেল বাই 628 পিক্সেল বিশিষ্ট একটি ইমেজ আপলোড করতে হবে। শিরোনাম এবং ডেসক্রিপশন লিখুন। তারপর কল-টু-অ্যাকশন বাটন যোগ করুন এবং লোকেরা আপনার পণ্য যে ওয়েবসাইটে গেলে দেখতে পাবে এরকম একটি লিঙ্ক যুক্ত করুন।

ধাপ-৬. আপনার বিজ্ঞাপন স্থান নির্ধারণ করুনঃ

ডিফল্টরূপে, ফেসবুকে “অটোমেটিক প্লেসমেন্টস” নির্বাচিত থাকবে যা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং শ্রোতা নেটওয়ার্ককে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে তবে সাধারণত সেরা ফলাফলের জন্য আপনি প্লেসমেন্টগুলি অপটিমাইজ করতে পারেন।

তারপর আপনি আপনার অ্যাড টি প্রকাশ করার জন্য publish বাটনে ক্লিক করুন।

আপনার অ্যাড ক্যাম্পেইন হয়ে গেছে।

পেমেন্টঃ আপনি এখন পেমেন্ট করার জন্য সেটিং এ ক্লিক করে পেমেন্ট সেটিং এ গিয়ে পেমেন্ট করে দিলেই আপনার অ্যাড ম্যানেজার থেকে ক্যাম্পেইন রান হয়ে যাবে।

এভাবে আমরা ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার ব্যবহার করে অ্যাড ক্যাম্পেইন করতে পারি। ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজারের মাধ্যমে আমরা ক্যাম্পেইন করা অ্যাডগুলো থেকে সেট তৈরি করতে পারি। এটার আরও অনেক কাজ রয়েছে। সেটা নিয়ে অন্যদিন আলোচনা করব। আশা করি এই আর্টিকেল থেকে অনেকটাই ধারনা করতে পেরেছেন যে অ্যাড ম্যানেজার কিভাবে কাজ করে এবং আমরা ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার কি জন্য ব্যবহার করে থাকি। সঠিকভাবে অ্যাড ম্যানেজার রান করলে এটা থেকে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। আপনি যদি দ্রুত আপনার ব্যবসায়কে সবার কাছে পরিচিত করতে চান তাহলে ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজারের মাধ্যমের পেজ বুস্ট করা বা বিজ্ঞাপন দেওয়া একটি দুর্দান্ত উপায়।

 

Leave a Reply