ডিজিটাল মার্কেটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজঃ
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে আমরা পৃথিবীর অনেককিছু সম্পর্কে জানতে পেরেছি যা আমাদের অজানা ছিল। ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে সবাই এখন আধুনিক হয়ে উঠেছে। আধুনিকতার স্পর্শে এখন মার্কেটিংয়ের পদ্ধতিও আধুনিক হয়ে উঠেছে। এখন সব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে প্রচার করে থাকেন। অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন। আবার ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং করছেন।
ফ্রিল্যান্সিংঃ
ফ্রিল্যান্সিংকে অর্থ হচ্ছে মুক্ত পেশা। কোনো ব্যক্তি যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের অধীনে থেকে কাজ না করে স্বাধীনভাবে কাজ করে তাকেই আমরা বলি ফ্রিল্যান্সিং বা মুক্ত পেশা। ফ্রিল্যান্সিং এর কাজগুলো সাধারণত ইন্টারনেটের মাধ্যমেই বেশি হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশের ও পেশার মানুষ ফ্রিল্যান্সিং করেন।
তবে সাধারণত যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছাত্র, পড়ালেখার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আয়ের পথও বেছে নিয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং এ কাজের পরিধি অনেক বেশি এখানে আপনি আপনার পছন্দের কাজটি করতে পারবেন। যে কাজে আপনি বেশি দক্ষ সেই কাজ করেই আপনি খুব সহজেই সাফল্য অর্জন করতে পারবেন। আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং করে ফ্রিলান্সিংয়ে আপনি ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।
চুলন ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয় কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ডিজিটাল মার্কেটিংঃ
আমরা সবাই ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে অবগত। Digital মানে আধুনিক আর Marketing হচ্ছে বিপণন। ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে আমরা বুঝি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে Product & service এর প্রচার করা বা বিজ্ঞাপণ দেওয়া। ক্রমাগত এর ব্যবহার ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ফলে অনেক ব্যবসায়ী এবং অনেক বেকার নারী পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ঘরে বসে কাজ করে তারা আয় করতে পারছে।
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কিছু উল্লেখযোগ্য কাজঃ
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরিধি অনেক বিস্তৃত। যে কাজে আপনি দক্ষ সেটা নিয়েই আপনি আপনার ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। কাজের দক্ষতা সাফল্য অর্জন করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
SEO:
SEO এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে আপনার ওয়েবপেজ বা ওয়েবসাইটকে অনুসন্ধানকারীদের অনুসন্ধান তালিকার প্রথম দিকে রাখা যাতে এটি অনুসন্ধান করলে ফলাফলে সবার প্রথমে দেখানো হয়। ভিজিটররা যখন কোন প্রশ্ন লিখে সার্চ দিবে তখন ফলাফলের প্রথম পেজে ওয়েবসাইটটিকে দেখানোর জন্য SEO করা হয়ে থাকে। SEO এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটের ranking এবং visibility বাড়ানো হয়। যেসব সার্চ ইঞ্জিন সবাই বেশি ব্যবহার করে সেগুলো নিম্নে দেওয়া হলঃ
- গুগল
- ফেসবুক
- ইউটিউব
- টুইটার
- Linked in
- ইন্সটাগ্রাম
- ইমেইল
- Bing ইত্যাদি।
উপরোক্ত সার্চ ইঞ্জিনগুলোই অধিকাংশ মানুষের কাছে বেশি পরিচিত এবং জনপ্রিয়। এগুলোই সাধারণত ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
SEO থেকে আয়ের উপায়:
কিওয়ার্ড রিসার্চ করে ওয়েবসাইটটিকে গুগলের ফলাফলের তালিকার শীর্ষে আনতে পারলে সাইটে অনায়াসেই প্রচুর ট্রাফিক নিয়ে আসা সম্ভব। তারপর সেখানে গুগল অ্যাডসেন্স জুড়ে দিলেই আপনি আপনার সাফল্যের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারবেন। আপনি যদি পাশাপাশি ব্লগিং করতে চান SEO আপনাকে সহায়তা করবে। আপনার ওয়েবসাইটটি সবার কাছে পৌঁছে যাবে।
PPC পে পার ক্লিকঃ
Pay per click হচ্ছে প্রতি ক্লিকে অর্থ প্রদান। অনুসন্ধানকারীর ফলাফলের তালিকার শীর্ষে যাওয়ার জন্য গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলোকে অর্থ প্রদান করাই হচ্ছে পে পার ক্লিক। প্রতি ক্লিকের জন্য আপনাকে সার্চ ইঞ্জিনকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হবে।
আপনি যদি বিজ্ঞাপনদাতা হয়ে থাকেন তাহলে ইন্টারনেট বিপণনের জন্য সার্চ ইঞ্জিনকে প্রতিটি বিজ্ঞাপনে প্রতিবার ক্লিকের জন্য অর্থ প্রদান করতে হবে। গুগল অ্যাডওয়ার্ডের মাধ্যমে PPC পেশাদাররা কীওয়ার্ড অনুসন্ধান করে যা আপনার ওয়েবসাইটটিকে ভালভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
SEM (সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং):
Search Engine Marketing সাধারণত PPC ও SEO উভয়ের সমন্বয়ে হয়ে থাকে। সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক নিয়ে আসা খুব সহজ কাজ নয়, তাই SEO অর্থ প্রদান না করেই ট্রাফিক আনতে সাহায্য করে এবং PPC অর্থ প্রদানের মাধ্যমে ট্রাফিক আনতে সাহায্য করে। প্রথমত আপনাকে এমন কীওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে যা আপনার ব্যবসায়ের পণ্য বা পরিসেবার সাথে প্রাসঙ্গিক এবং অনুসন্ধানকারীরা অনুসন্ধানের সময় বেশি ব্যবহার করে থাকে।
SMM (সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং):
Social Media Marketing বলতে আমরা বুঝি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা বিপণনের প্রক্রিয়া। বর্তমান সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো হচ্ছে
- ফেইসবুক
- টুইটার
- ইনস্টাগ্রাম
- Linked in
- Youtube
- Bing ইত্যাদি।
Social Media Marketing এর মাধ্যমে আপনার পণ্য ও সেবা সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন। অনলাইন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার প্রচার করা সহজ এবং কম ব্যয়বহুল। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সক্রিয় থাকা ফলোয়ার আপনার বিজ্ঞাপনগুলো দেখলে ফ্রিতে আপনার ব্যবসায়ের প্রচার হবে। আপনি পেইজ বুস্টের মাধ্যমে ফলোয়ার বাড়াতে পারবেন এবং ভোক্তার কাছে আপনার পণ্য ও সেবা খুব সহজে পৌঁছে যাবে। ফেইসবুক পেইজে আপনি লিঙ্গ, বয়স, অবস্থান, পছন্দ ভেদে ভোক্তা নির্বাচন করতে পারেন। এর মাধ্যমে সহজেই আপনার ব্যবসার প্রচার ও প্রসার বাড়াতে পারেন।
কন্টেন্ট মার্কেটিংঃ
মার্কেটিংয়ের এই পদ্ধতিটি পূর্বের পদ্ধতিগুলো থেকে কিছুটা আলাদা। গ্রাহকদের সরাসরি পণ্য ও সেবা প্রদান না করে সেগুলো সম্পর্কে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করাই কন্টেন্ট মার্কেটিং। বিশ্বের বৃহত্তম ব্র্যান্ডগুলো তাদের ব্যবসা সম্পর্কিত ব্লগ, চিত্র, ভিডিও ও লেখা পোস্ট করে যা বিনোদনমূলক এবং তথ্যবহুল। এতে তাদের ব্যবসা ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পায়। আপনার পোস্টে কোনো কিছু বিক্রি করার উদ্দেশ্য ছাড়াই ব্যবসাকে প্রচার করার জন্য সমৃদ্ধ ও আকর্ষক তথ্য সরবরাহ করতে পারেন। ব্লগ, ভিডিও, চিত্র ও লেখা প্রকাশ করার মাধ্যমে আপনি আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে গ্রাহকদের বেশি তথ্য সরবরাহ করতে পারবেন এবং তারা আপনার ব্র্যান্ডকে বেশি বিশ্বাস করবে।
ইমেইল মার্কেটিং:
ডিজিটাল মার্কেটিং আরেকটি প্রক্রিয়া ইমেইল মার্কেটিং। সরাসরি ভোক্তার ইমেইলের মাধ্যমে ভোক্তার কাছে তথ্য, অফার, ব্লগ ইত্যাদি প্রেরণ করাই হচ্ছে ইমেইল মার্কেটিং। বিজ্ঞাপণদাতা ও ভোক্তার সংযোগ স্থাপনের জন্য ইমেল একটি প্রাণবন্ত মাধ্যম। ইমেলের মাধ্যমে বিপণনের প্রচার ও ভোক্তাকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে।
ইমেল মার্কেটিং এর মাধ্যমেও আপনি আপনার পণ্য ও সেবার প্রচার করতে পারবেন। পণ্য ক্রয় করার পরে ও আপনি ভোক্তার কাছে আপনার নতুন কোনো পণ্যের অফার বা ব্লগ পাঠাতে পারবেন। Gmail বা অন্য কোনো ইমেইল থেকে আপনি নির্দিষ্ট সংখ্যক ইমেইল পাঠাতে পারবেন এবং আপনি যদি নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি ইমেল পাঠান তাহলে spamming এর সন্দেহে
আউটলুক এর মাধ্যমে আপনার অ্যাকাউন্টটি ব্লক করে দিতে পারে। এর জন্য আপনাকে কিছু টুলস ব্যবহার করতে হবে, যেমনঃ
- FeedBurner
- Drip
- SendinBlue
- GetResponse
- Mailchimp
- Sender ইত্যাদি।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং:
কোনো অনলাইন কোম্পানির পণ্য ও সেবা বা অনলাইনের মাধ্যমে কেনা যায় এমন কোনো জিনিস নিজের ওয়েবসাইট, ব্লগ, ইউটিউব, ফেইসবুক পেইজ ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাফিলিয়েট লিংকের মাধ্যমে promote করাই হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অন্য কোনো অনলাইন কোম্পানির পণ্য ও সেবা প্রচার করলে ওই কোম্পানি আপনাকে কমিশন প্রদান করবে।
মনে করুন,, আমাজনের কিছু পণ্য আপনার ফেইসবুকের মাধ্যমে প্রচার করলেন,
পণ্যটি সে আপনার ওয়েবসাইট থেকে কিনতে পারে আবার আমাজনের ওয়েবসাইট থেকেও কিনতে পারেন। তবে গ্রাহক পণ্যটি যেখান থেকেই কিনুক না কেন আপনি পণ্যটি প্রচার করার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমান কমিশন দেওয়া হবে। এটাই মূলত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হলে কি করতে হবে?
- যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়ায় পেইজ থাকতে হবে, যেমন: ফেইসবুক পেইজ, ইউটিউব চ্যানেল, ব্লগ ইত্যাদি। সোশ্যাল মিডিয়ায় পেইজ থাকার পাশাপাশি প্রচুর ট্রাফিক বা ভিজিটর থাকতে হবে।
- ভালো অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম জয়েন করতে হবে এবং আপনি কোন ধরণের পণ্য ও সেবা প্রচার করতে চান সেটা বাছাই করতে হবে।
- আপনার বেছে নেওয়া সামগ্রী ভিত্তিতে আপনাকে একটি অ্যাফিলিয়েট লিংক দেওয়া হবে। এই লিংকের মাধ্যমে ভােক্তা সরাসরি সামগ্রী ক্রয় করতে পারবে।
- যদি আপনার পেইজ থেকে কেউ কিছু না ও কেনে তারপরও আপনি কমিশন পাবেন।
মোবাইল Advertising:
Mobile Advertising হল মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে যেমন: স্মার্টফোন, ট্যাবলেট গুলোতে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা। কোনো কোম্পানি মোবাইলে টেক্সট অ্যাড, SMS, ব্যানারের মাধ্যমে মোবাইল মার্কেটিং করে থাকে। বর্তমান গ্রাহকরা টিভির সামনে বসে থাকার চেয়ে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও অন্যান্য মােবাইল ডিভাইস ব্যবহার করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। গ্রাহকদের টিভি, ল্যাপটপ কম্পিউটারের চেয়ে মোবাইল ডিভাইসে বিজ্ঞাপণ দেখার সুযোগ তুলনামূলকভাবে বেশি। কারণ আমরা শুয়ে, বসে, রাস্তায় ও বাসে বসে মোবাইল ব্যবহার করতে পারি এবং অন্যান্য ডিভাইস ব্যবহার করার চেয়ে মোবাইল ব্যবহার করা সহজ ও সুবিধাজনক। তাই মোবাইল Advertising খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মোবাইল Advertising শুরু হয়েছিল SMS এর মাধ্যমে। এখন এটা মোবাইল ওয়েব এবং অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। মোবাইল Advertising এর জনপ্রিয় মডেল হচ্ছে CPI(Cost per Install)। যদি ব্যবহারকারী কোন অ্যাপ ইন্সটল করে তাহলে তাকে অর্থ প্রদান করতে হয়।
কিভাবে মোবাইল মার্কেটিং করতে হয়?
- Push notifications
- Image text and banner ads
- Click-to-download ads
- Click-to-call ads
- Click-to-message ads
শেষকথা: বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। কিন্তু এগুলোকে কাজে লাগিয়ে আয় করার চিন্তা করি খুব কম। সোশ্যাল মিডিয়া সঠিকভাবে ব্যবহার করে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে ঘরে বসে আয় করা সম্ভব। তাই বিনোদনের পাশাপাশি যদি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আয় করে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারি।