ইমেইল মার্কেটিং কি, ইমেইল মার্কেটিং কেন করা হয় এবং ইমেইল মার্কেটিংয়ের যে ব্যাপারগুলোতে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্লগাররা তাদের ওয়েবসাইট এবং ব্যবসায়ের প্রচার করে থাকে। তবে তাদের কন্টেন্টগুলো ফেসবুক এবং টুইটারে শেয়ার হওয়ার পরে আপনার ফলোয়ারদের কাছে পৌঁছানো ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে।
বর্তমানে ফেসবুক পেজ অর্গানিকভাবে প্রচার করার কারণে ট্রাফিকের উপস্থিতি অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। এখন কয়েকটি লাইক, শেয়ার এবং ক্লিক পেতে আপনার ফেসবুকে প্রকাশিত পোস্টগুলো বুস্ট করতে হলে আপনাকে অর্থ দিতে হবে।এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রচারের পতনের মাঝামাঝি সময়ে, এমন একটি Marketing channel রয়েছে যা কয়েক বছর ধরে তার গুণগত মান এবং কার্যকারিতা বজায় রেখেছে। এটি হচ্ছে Email Marketing।
আপনি যদি কোনও নতুন ব্লগ বা কোনও ওয়েবসাইট শুরু করে থাকেন, তাহলে আপনি আপনার কন্টেন্ট গুলো প্রচার করার জন্য email marketing strategy তৈরি করুন। এতে আপনি সহজেই কন্টেন্টগুলো দ্রুত প্রচার করতে পারবেন। আপনি কীভাবে কয়েকটি সাধারণ পদক্ষেপে এটি শুরু করতে পারেন সেটা নিয়েই আজ আলোচনা করব।তবে তার আগে জেনে নেই email marketing কি?
ইমেইল মার্কেটিংঃ
ব্যবসায়ের পণ্য ও পরিষেবাদি প্রচারের পাশাপাশি গ্রাহককে পণ্য ও সেবা ক্রয়ে আগ্রহী করার জন্য ইমেলের ব্যবহার করা হয়ে থাকে।এটাকেই মূলত ইমেইল মার্কেটিং বলা হয়ে থাকে। ইমেল মার্কেটিং একটি advertisement strategy যা আপনার ইমেল তালিকার গ্রাহকদের নতুন পণ্য, ছাড় এবং অন্যান্য পরিষেবাদি সম্পর্কে সচেতন করতে পারে।
কোনও সম্ভাব্য বা বর্তমান গ্রাহকের কাছে প্রেরিত প্রতিটি ইমেল ইমেল বিপণন হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। ইমেল মার্কেটিং strategy গুলোর প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে আনুগত্য, বিশ্বাস বা ব্র্যান্ড সচেতনতা গড়ে তোলা।
ইমেল মার্কেটিং বিশ্বজুড়ে অসংখ্য ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করে থাকেন। যারা বিপণনের এই পদ্ধতির সাথে অপরিচিত তারা তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারবেন না কেন এটি এত জনপ্রিয়। তবে ইমেল মার্কেটিংকে কেন সবচেয়ে কার্যকর মার্কেটিং strategy হিসাবে বিবেচনা করা হয় তার কিছু কারণ বিস্তারিত জানবো-
কম ব্যয়ের জন্য(Low cost):
ইমেল মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে সুস্পষ্ট সুবিধা হল মূলধারার বিজ্ঞাপনের তুলনায় এর ব্যয় অনেকটাই কম। বিলবোর্ড, ম্যাগাজিন বা টেলিভিশন চ্যানেলে বিজ্ঞাপন করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমরা অর্থ ব্যয় না করেও ইমেইলের মাধ্যমে মার্কেটিং করতে পারি। ইমেল বিপণনকারীরা তাদের ইমেলগুলি স্বয়ংক্রিয় করতে, ট্র্যাক করতে এবং মূল্যায়নের জন্য MailChimp এর মতো সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে থাকে। একসাথে হাজার হাজার ইমেল প্রেরণের জন্য একটি ছোট ওভারহেড থাকতে পারে।
বিক্রয় বৃদ্ধিঃ
যদিও ইমেল বিপণন স্পষ্টভাবে একটি দুর্দান্ত মার্কেটিং সরঞ্জাম, এটি আসলে আপনার বিক্রয়ও উন্নত করতে পারে। যখন কোন পণ্যের ব্যপারে ইমেইলে বার্তা আসে তখন সবাই ইমেইল তা ওপেন করে এবং সেটা পরে। এতে আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের ব্যপারে জানতে পারে এবং পণ্যটি ক্রয় করার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
টার্গেটেড ম্যাসেজ সরবরাহঃ
বেশিরভাগ মার্কেটার তাদের ব্র্যান্ডের প্রতি আগ্রহী ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে মার্কেটিং করে থাকে। ইমেল বিপণনকারীরা নির্দিষ্ট গ্রাহকদের কাছে তাদের পণ্য ও সেবার প্রচারের মাধ্যমে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে পারে।প্রত্যেকটা লোকই সবসময় তাদের ইমেইল চেক
করে তাই আপনি যদি আপনার ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেসের জন্য কোন কন্টেন্ট পোস্ট করেন এবং নির্দিষ্ট গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে চান তার জন্য সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হচ্ছে ইমেইল মার্কেটিং।
ওয়েবসাইটে ট্র্যাফিক জেনারেটঃ
আপনি দুর্দান্ত কন্টেন্ট তৈরি করে ভাবছেন কীভাবে এটি আপনার গ্রাহকদের কাছে ছড়িয়ে দেবেন? আপনি ইমেলের মাধ্যমে তাদের কাছে কন্টেন্টটি পৌঁছে দিতে পারেন। ইমেল মার্কেটিং campaign এর মাধ্যমে, আপনি আপনার সাইটে ট্র্যাফিক প্রেরণ এবং এসইও করতে পারেন। এছাড়াও আপনি আপনার ব্র্যান্ড এবং আপনার সাইটের সাথে আপনার গ্রাহকদের engaged করতে পারবেন।
যখন আপনি ইমেল তৈরি করবেন এবং কন্টেন্ট পোস্ট করবেন তখন আপনার কন্টেন্টের লিঙ্ক তৈরি হবে এবং প্রতিটি ইমেলে কল টু অ্যাকশন বাটন থাকা উচিত যাতে পাঠকরা আপনার সাইটে ক্লিক করতে পারেন।আর আপনার সাইটে থাকা কন্টেন্টগুলো পড়তে বা দেখতে পারেন।
সঠিক সময়ে সঠিক লোকের কাছে পৌঁছানোঃ
ইমেইল marketing campaign এর মাধ্যমে আপনি সঠিক সময়ে সঠিক গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যেতে পারবেন।কোন ব্যবসায় বৃদ্ধি করার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে লোকের কাছে পৌঁছানো অনেক সহজ কারণ তারা সর্বদা তাদের ইমেল চেক করে। তারা যে কোনও সময় এটি একাধিক ডিভাইসে ওপেন করতে পারে এবং ইমেইল চেক করতে পারে। যখন প্রতিনিয়ত গ্রাহক আপনার কন্টেন্টগুলো দেখে তখন আপনার ব্যবসায়ের উন্নতি হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
গ্রাহকদের বেশি গুরুত্ব প্রদান করাঃ
যে কোনও ব্যবসায়ের মূল লক্ষ্যগুলির মধ্যে একটি হল আপনার গ্রাহকদের মূল্য দেওয়া যাতে তারা আপনাকে ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে পণ্য বা সেবা ক্রয় না করে।
আপনি যদি আপনার কাস্টমারকে খুশি রাখতে পারেন তাহলে সে বার বার আপনার কাছেই ফিরে আসবে। আর এরজন্য সবচেয়ে ভালো কৌশল হচ্ছে ইমেইল মার্কেটিং। যখন আপনি কোন কিছু ওয়েবসাইটে পোস্ট করবেন তখন আপনার পোস্টটি সব গ্রাহকের ইমেইলে পাঠানো হয়ে যাবে এতে আপনার গ্রাহক আপনার আপডেট জানতে পারবে। গ্রাহকরা ভাববে আপনি তাদের গুরুত্ব দিচ্ছেন এতে তারা আপনার উপর সন্তুষ্ট থাকবেন।
গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করাঃ
বিপণনকারী হিসাবে আপনার গ্রাহকের সাথে যোগাযোগের উন্নতি করা সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার শ্রোতাদের যখন মনে হয় তারা আপনার সাথে কথা বলতে পারে, তখন তারা আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি অনুগত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ইমেল বিপণনের মাধ্যমে আপনি আপনার আরও শ্রোতার কাছে পৌঁছাতে এবং ব্র্যান্ডের অ্যাওয়ারনেস তৈরি করতে পারেন। এছাড়াও, এই ইমেলগুলি আপনার গ্রাহকদের বছরের প্রতিটি সময় ব্যস্ত রাখে।
শক্তিশালী গ্রাহক সম্পর্ক তৈরিঃ
ইমেল মার্কেটিং ধারাবাহিকভাবে গ্রাহকদের ইনবক্সে সরাসরি তথ্য সরবরাহ করে এটা আপনার এবং গ্রাহকের মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে। আপনি যখন আপনার পণ্য বা পরিষেবা সহায়ক টিপস বা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবেন তারা আপনাকে পছন্দ করতে শুরু করবে।
তাদের কোন পণ্য বা পরিষেবা দরকার হলে প্রথমে আপনার কাছ থেকে কিনতে চাইবে।এতে আপনি বেশি লাভবান হবেন।
ইমেইল মার্কেটিং করার এরকম আরও অনেক কারণ আছে। যেমনঃ
- Lead বৃদ্ধি করা।
- নতুন গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো এবং বিদ্যমান গ্রাহকদের ধরে রাখা
- রিয়েল-টাইম মার্কেটিং
- মোবাইল ইউজার ফ্রেইন্ডলি ইত্যাদি।
ইমেইল মার্কেটিংয়ের যে ব্যাপারগুলোতে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিতঃ
স্প্যাম – বাণিজ্যিক ইমেল বা ‘স্প্যাম’ গ্রাহকদের বিরক্ত করে। যদি আপনি সঠিক লোকদের টার্গেট না করে ভুল গ্রাহককে বার্তা পাঠান তবে প্রাপক আপনার ইমেলটি ডিলিট করে দিতে পারেন। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার ইমেলটি আপনি সঠিক গ্রাহকের কাছে পাঠাচ্ছেন কিনা।
ডিজাইনের সমস্যা – আপনার ইমেলটি এমনভাবে ডিজাইন করা উচিত যাতে এটি একাধিক ডিভাইসে এবং ইমেল সরবরাহকারীরা দেখতে পারে। কিছু লোক কেবল টেক্সট ইমেইল পছন্দ করে আবার কেউ টেক্সট এর সাথে ইমেজ পছন্দ করে। তাই খেয়াল রাখতে হবে আপনি কোন কন্টেন্টগুলো গ্রাহকের কাছে পাঠাবেন।যদি আপনার কন্টেন্ট ডিজাইনে সমস্যা থাকে গ্রাহক আপনার কন্টেন্টগুলো আর দেখবেনা।
সাইজে সমস্যা- দ্রুত ডাউনলোডের জন্য ফাইলগুলি যথেষ্ট ছোট হওয়া দরকার। অনেকগুলি চিত্রযুক্ত ইমেলগুলি লোড হতে খুব বেশি সময় নিতে পারে, আপনার দর্শকদের হতাশ করে এবং তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই ফাইলগুলো বেশি বড় না করে বেশি তথ্যবহুল কিন্তু ছোট কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে।
এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে আপনি দ্রুত গ্রাহকের মনে জায়গা করে নিতে পারবেন।
প্রতিটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ব্যবসায়ে উন্নতির কথা চিন্তা করে মার্কেটিং করে থাকেন। কম খরচে বেশি প্রচার হবে এরকম কোনো কৌশল বেঁছে নেন সবাই। ইমেইল মার্কেটিং এরকম একটি কৌশল।
আমরা আজ জানলাম ইমেইল মার্কেটিং কি, কেন ইমেইল মার্কেটিং করা হয় এবং ইমেইল মার্কেটিংয়ে যে ব্যাপারগুলোতে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এরপরে আমরা জানবো কিভাবে ইমেইল মার্কেটিং করব। তবে ইমেইল মার্কেটিং করার আগে অবশ্যই এর গুরুত্বটা জানা খুবই জরুরী।