অফ পেইজ এসইও কৌশল ব্যবহার করে সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজে র্যাঙ্কিং পাওয়ার উপায়
অফ-পেইজ এসইও হচ্ছে সেই কৌশল যা সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্ট পেইজে(SERP) কোনো ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করতে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত ওয়েবসাইটে অফ-পেজ এসইও করা হয়ে থাকে বাহ্যিকভাবে।
যে কোনো ওয়েবসাইটের লিংক বা পোস্ট প্রোমোট করাই হচ্ছে অফ পেইজ এসইও। সার্চ রেজাল্ট পেইজ রেজাল্টগুলোতে কোনও ওয়েবসাইটকে উচ্চতর র্যাঙ্কিংয়ের উদ্দেশ্যে অফ পেইজ এসইও করা হয়।
অফ-পেইজ এসইও গুরুত্বপূর্ণ কেন:
সার্চ ইঞ্জিনগুলি সবসময় অনুসন্ধানকারীকে সেরা ফলাফল প্রদর্শন করতে চায়। আর এটি অর্জনের জন্য তারা বেশ কয়েকটি অন পেইজ এসইও এবং অফ পেইজ এসইও উপাদান বিবেচনা করে যার দ্বারা সহজেই ভালো ফলাফল খুঁজে পেতে পারে।
আপনি যদি কোনোভাবে প্রমাণ করতে পারেন আপনার ওয়েবসাইটটি সেরা এবং ভালমানের তাহলে সার্চ ইঞ্জিন গুলো আপনার ওয়েবসাইটটিকে SERP তে র্যাঙ্কিং দিতে পারে।
উচ্চমানের এবং প্রয়োজনীয় একটি ওয়েবসাইটের অন্যান্য ওয়েবসাইটগুলো থেকে রেফারেন্স বা ব্যাকলিংক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যে ওয়েবসাইটগুলো বেশি ব্যাকলিংক পায় গুগল বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে তাদের র্যাঙ্কিং পাবার সম্ভাবনাও বেশি।
সফল অফ-পেইজ এসইও এর জন্য ওয়েবসাইট নিম্নলিখিত সুবিধাগুলো পেয়ে থাকে-
র্যাঙ্কিং- অফ পেইজ এসইওর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হচ্ছে র্যাঙ্কিং। অফ পেইজ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর জন্য একটি ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজে উচ্চতর স্থান পায় এবং বেশি ওয়েব ট্র্যাফিক পায়।
পেইজ র্যাঙ্ক বৃদ্ধি – অফ পেইজ এসইও কোনো ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজ এর প্রথম ১০ টি রেজাল্ট এর মধ্যে থাকতে সহায়তা করে। প্রথম ৪ টি রেজাল্টকে বলা হয় “AdWords top” আর পরের ৬ টি রেজাল্টকে বলা হয় “AdWords bottom”। আপনি যদি সঠিকভাবে অফ পেইজ এসইও করতে পারেন তাহলে খুব দ্রুতই আপনার ওয়েবসাইট র্যাঙ্ক ০ থেকে ১০ এর মধ্যে থাকতে পারে। র্যাঙ্ক ০ ত্থেকে ১০ একটি সংখ্যা যা গুগলের দৃষ্টিতে একটি ওয়েবসাইটের গুরুত্ব নির্দেশ করে।
পেইজ র্যাঙ্কিং সিস্টেম এর মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিনগুলো অনুসন্ধানকারীকে সর্বাধিক প্রাসঙ্গিক ফলাফলগুলো প্রদর্শন করতে পারে।
বৃহত্তর এক্সপোজার – উচ্চতর র্যাঙ্কিংয়ের জন্য একটি ওয়েবসাইট বৃহত্তর এক্সপোজার পায়। কারণ যখন কোনো ওয়েবসাইট শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে থাকে তখন ওয়েবসাইটটিতে ভিজিট বেশি হয়, বেশি ব্যাকলিংক পায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ওয়েবসাইটগুলোকে বেশি উল্লেখ করে থাকে।
বিশ্বস্ততা – উপরের বিষয়গুলোর পাশাপাশি গুগল সম্প্রতি E-A-T (Expertise, Authority and Trustworthiness)ধারণাটি চালু করেছে যা র্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এটি অফ পেইজ এসইও এর সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
সরল ভাষায়, গুগল এমন কোনও ওয়েবসাইটকে র্যাঙ্ক করতে চায় যা কোনো বিষয়ে দক্ষতা এবং কর্তৃত্ব প্রদর্শন করে এবং এটি অ্যালগরিদমের দ্বারা নেওয়া ওয়েবসাইটগুলো বিশ্বাস করা যায় তা নিশ্চিত করার একটি উপায়।
অফ পেইজ এসইও কৌশলঃ
অফ পেইজ এসইও বলতে আপনার ওয়েবসাইটের সীমানার বাইরে যে ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করা হয় তা বোঝায়। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অফ পেইজ এসইও কৌশলগুলি হল:
লিঙ্ক বিল্ডিংঃ লিঙ্ক বিল্ডিং সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং কার্যকর অফ পেইজ এসইও কৌশল।লিঙ্ক বিল্ডিং কোনও সফল এসইও কৌশলের মূল অংশ যা আপনার সাথে লিঙ্ক করার জন্য অন্যান্য ওয়েবসাইটগুলো জড়িত – একটি সাইট থেকে অন্য সাইটে একটি সাধারণ হাইপারলিঙ্ক। এটি কোনো ওয়েবসাইটের র্যাঙ্কিংয়ের অন্যতম অংশ। যদি বিভিন্ন ওয়েবসাইট আপনার ওয়েবসাইটকে ব্যাকলিঙ্ক হিসেবে তার কন্টেন্টে হাইপারলিংক করে তাহলে আপনি আপনার প্রতিযোগীদের পিছনে ফেলে আপনার ওয়েবসাইটকে উচ্চতর র্যাঙ্কে নিয়ে যেতে পারেন।
বছরের পর বছর ধরে ওয়েবমাস্টাররা উচ্চতর র্যাঙ্কিং পেতে তাদের ওয়েবসাইটগুলোতে লিঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা করেন এবং তারা লিঙ্ক সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি উপায় আবিষ্কার করেছিলেন।
- ইন্টারনাল লিংক/ ইনবাউন্ড লিংকঃ
প্রায়শই যখন আমরা লিঙ্ক বিল্ডিংয়ের বিষয়ে কথা বলি আমাদের প্রচেষ্টা কেবলমাত্র বাহ্যিক লিঙ্কগুলি তৈরি করার দিকে নিবদ্ধ থাকে তবে সত্যিকার অর্থে আপনার ওয়েবসাইটে অভ্যন্তরীণ লিংক বিল্ডিং আপনার ওয়েবসাইটটিকে দ্রুত র্যাঙ্কে নিয়ে যেতে পারে।
আপনার ওয়েবসাইট জুড়ে পেইজ র্যাঙ্ক করার জন্য অভ্যন্তরীণ লিঙ্কিং গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি আপনার কন্টেন্টগুলো তে আপনার ওয়েবসাইটের পেইজ লিংকগুলো হাইপার লিংক করে দিতে পারেন। এতে আপনার ভিজিটর সংখ্যা বাড়বে এবং আপনি দ্রুত SERP তে র্যাঙ্কিং করতে পারবেন।
- আউটবাউন্ড লিংক/ এক্সটারনাল লিংকঃ
আউটবাউন্ড লিঙ্ককে এক্সটারনাল লিঙ্কও বলা হয়, আপনার ওয়েবসাইট থেকে অন্য কোনো ওয়েবসাইটে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওয়েবসাইটে এক্সটারনাল লিঙ্ক দেওয়া হয়ে থাকে। আপনার জন্য একটি আউটবাউন্ড লিঙ্ক হল অন্য কারও জন্য ইনবাউন্ড লিঙ্ক। আউটবাউন্ড লিঙ্কগুলো এমন এক উপায় যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে প্রয়োজনীয় কন্টেন্টগুলো সহজে পেয়ে যায়। আবার একটি ওয়েবসাইট বেশি অর্গানিক ট্র্যাফিক অর্জন ও বিশ্বাস তৈরি করতে পারে এবং SERP তে র্যাঙ্কিং পেতে পারে।
Do follow : Do follow লিংকগুলো এমন একটি এইচটিএমএল বৈশিষ্ট্য যা অনুসন্ধান বটগুলোকে লিঙ্কগুলো অনুসরণ করতে অনুমতি দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। কোনো ওয়েবমাস্টার যদি do follow লিঙ্কের সাথে আপনার সাইটের লিঙ্কটি ব্যাকলিংক করে থাকে তবে আপনি লিঙ্ক জুস পাবেন। এটা বেশি ভিজিটর এবং উচ্চতর পেইজ র্যাঙ্ক পেতে আপনার ওয়েবসাইটকে সত্যই উপকৃত করে।
No follow : No follow ফলো লিঙ্কটি এমন লিঙ্ক যা আপনার ওয়েবসাইটকে পেইজ র্যাঙ্ক করতে সহায়তা করে না এবং SERP তে কোনো পেইজে স্থান নির্ধারণে সহায়তা করে না শুধুমাত্র ভিজিটর পেতে সহায়তা করে।
- ব্রোকেন লিঙ্ক বিল্ডিংঃ
ব্রোকেন লিঙ্ক বিল্ডিং ব্যাকলিঙ্ক পাওয়ার একটি আকর্ষণীয় কৌশল। ব্রোকেন লিঙ্ক বিল্ডিং এর উদ্দেশ্য হল ব্রোকেন লিঙ্কগুলো খুঁজে পাওয়া এবং যে ওয়েবসাইটটিতে ব্রোকেন লিঙ্ক রয়েছে এমন ওয়েবসাইটের মালিকের সাথে যোগাযোগ করা। তারপরে আপনি তার আপডেট সরবরাহ করবেন এবং তাকে আপনার অনুরূপ কোনো কন্টেন্টের লিঙ্কের সাথে তার প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করবেন। এটি 404 error পৃষ্ঠাগুলোর সংখ্যা হ্রাস করতে সহায়তা করবে। যার ফলে আপনি ব্যাকলিংক পাবেন এবং ব্যবহারকারী তার ওয়েবসাইটটি থেকে ব্রোকেন লিংক remove করতে সক্ষম হবে।
- Reciprocal লিংক:
Reciprocal লিংক হচ্ছে পারস্পরিক ব্যাকলিংক বিনিময়। যেমন আপনি কোনো ওয়েবসাইট owner কে বললেন আমি আপনাকে আমার ওয়েবসাইটে আপনার ওয়েবসাইটকে ব্যাকলিংক দেব এবং আপ্নি আপনার আমার ওয়েবসাইটটিকেও ব্যাকলিংক করে দিন। তবে প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা না করে লিঙ্ক বিনিময় করা উচিত নয়।
সোশ্যাল বুকমার্কিংঃ সোশ্যাল বুকমার্কিং তাৎক্ষনিকভাবে ভিজিটর পাওয়ার অন্যতম সেরা উপায়। ফেসবুক, টুইটার, লিংকডিন এবং রেডডিট কয়েকটি শীর্ষ সামাজিক বুকমার্কিং সাইট। এই সাইটগুলোতে আপনি বিভিন্ন পোস্ট বুকমার্ক করে ওয়েবসাইটে ভিজিটর বাড়াতে পারবেন। যদি আপনি এটি ব্যবহার করেন ভিজিটর বাড়ানোর জন্য কন্টেন্টে নজরকাড়া ট্যাগলাইন লিখতে ভুলবেন না।
প্রশ্ন এবং উত্তরঃ
দুর্দান্ত কন্টেন্ট লেখা এবং সঠিক লোকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পিন্টারৈস্ট, Quora, রেডডিট, ওভারফ্লো এবং ইয়াহু এর মতো বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহার করা হয়। একটি উচ্চমানের প্রাসঙ্গিক প্ল্যাটফর্ম বেছে নিন এবং আপনার niche সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো সন্ধান করুন এবং উত্তর দিন।
আপনি যদি একই বিষয়ে গাইড লিখে থাকেন তবে আপনার লিঙ্কটি আপনার সাইটে ছেড়ে দিন যাতে দর্শক সহজেই আপনার কন্টেন্টগুলো খুঁজে পায়। সতর্ক থাকুন যাতে লিঙ্কগুলো স্প্যামের মতো না দেখায়। যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করা হয় তবে এই কৌশলটি অফ পেইজ এসইও এর একটি গেম চেঞ্জিং কৌশল হতে পারে।
কমেন্ট ব্লগ পোস্টঃ
কোনো ওয়েবসাইটের ব্লগে কমেন্ট করার মাধ্যমে ব্যাকলিংক পাওয়া সম্ভব। যেসব ব্লগে কমেন্ট করা যায় সেই ওয়েবসাইটগুলো খুঁজে সেখানে কমেন্ট সেকশনে ওয়েবসাইটের URL লিংক দিলে ব্যাকলিংক এবং ভিজিটর পাওয়া যায়। তবে কমেন্ট করতে পারবেন এমন ব্লগ খুঁজে পেতে হলে food inurl blog, “leave a comment” লিখে সার্চ করলে সহজেই আপনি পেয়ে যাবেন।
গেস্ট ব্লগিংঃ
গেস্ট ব্লগিং কৌশলটি ব্যাকলিংক উপার্জনের দুর্দান্ত উপায়। এক মুহুর্তের জন্য আপনি ব্যাকলিঙ্ক পাবার কথা ভুলে চিন্তা করুন যে আপনার কন্টেন্টটি কোনো উচ্চ মানের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে আপনার দক্ষতা ভাগ করে নেওয়াই আপনার প্রোফাইলটি র্যাঙ্কিং করার ভাল সুযোগ। আপনি যদি কোনো ওয়েবসাইটের জন্য লিখতে চান এবং তার বিনিময়ে ব্যাকলিংক পেতে চান তাহলে গেস্ট ব্লগিং আপনার জন্য উপযোগী। এতে আপনি ভিজিটর পাবেন আবার জনপ্রিয়তা পাবেন আপনার পেইজটি র্যাঙ্ক করবে। আর এই ওয়েবসাইট গুলো খুঁজে পেতে আপনি
“write for us” লিখে সার্চ করুন।
অফ পেইজ এসইও এর মাধ্যমে ব্যাকলিংক পাওয়ার আর কিছু কৌশল হচ্ছে –
- ডিরেক্টরি সাইট
- শীর্ষ তালিকা
- RSS ফিড
- ইমেইল সিগনেচার
- ইউনিক/ রেফারিং ডোমেইন
- পোডকাস্ট গেস্টিং
- ইয়েলো পেজ
- উইকিপিডিয়া লিংক বিল্ডিং
আর এই কৌশলগুলো ব্যবহার করে ব্যাকলিংক পেলে একটি ওয়েবসাইট লিংক জুস পাবে এতে SERP তে র্যাঙ্ক পাবে এবং বেশি ভিজিটর পাবে।
শেষকথাঃ
অফ পেইজ এসইওর নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে তবে অন পেইজ SEO ছাড়া আপনি SERP তে উচ্চতর র্যাঙ্কিং পাবেন না। আপনি আপনার ওয়েবসাইটটিকে নিজেই এক্সপ্লোর করতে পারেন। আপনার ওয়েবসাইটে সফলভাবে অফ পেইজ SEO করতে পারলে আপনার ওয়েবসাইটের র্যাঙ্কিং পাবার সুযোগ তত বেশি উচ্চতর হতে পারে।
ব্যাকলিঙ্ক পাবার পাশাপাশি আপনার কন্টেন্টের মানের দিকেও বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। আপনার র্যাঙ্কিংয়ে কোনও পার্থক্য আনতে পারে এমন লিঙ্কগুলি পেতে আপনার অফ-পেইজ এসইওতে কাজ করুন।
প্রতিটি পদ্ধতি আলাদাভাবে চেষ্টা করে দেখুন এবং আপনার ওয়েবসাইটের জন্য সবচেয়ে ভাল কী কাজ কবে তা সন্ধান করুন তাহলে আপনি র্যাঙ্কিংয়ে ইতিবাচক প্রভাব দেখতে পাবেন।